পাখির কলকাকলীতে হিমেল এর ঘুম থেকে জেগে উঠা, সারাদিন পাখি নিয়ে খেলা করা ও পাখির প্রতি মায়া - ভালোবাসায় জড়ানো ছোট ছেলে মোঃ শাকিব হাসান হিমেল আজ পাখি উদ্যোক্তা।
হিমেল এর জন্মস্থান আমনুরা হলেও বেড়ে ওঠা পড়ালেখা শিবগঞ্জ এ যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে অবস্থিত । হিমেল কানসাট হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমান এ ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং ( ইলেকট্রিক্যাল) এর ছাত্র। পরিবারে বাবা -মা আদরের ছোট বোন আর একমাত্র আদরের ছেলে হিমেল।খুব ছোট বয়স থেকেই পাখির প্রতি এক মায়া কাজ করে হিমেল এর ভেতর।
জানা গেছে হিমের ২০০৯-২০১০ সাল এ যখন ক্লাস চতুর্থ - পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র যখন হিমেল এর ধুলো বালি মেখে খেলার বয়স তখন হিমেল এর পাখির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।তখন থেকে সামান্য কয়টা পাখি নিয়ে হিমেল খেলার ছলে তার পাখি পালন শুরু করেন।
অনেকের কাছে অনেক কথা
শুনেছে সে সময় তবে কারো কথায় কোন পরোয়া না করে পাখি নিয়ে অনেক কিছু শিখার গভির আগ্রহ পোষন করেন ও শেষ পর্যন্ত শিখেছেন।
পাখি পালন করলে পড়ালেখার ক্ষতি হয় কিন্তু সেটা হিমেলের কখনও মনে হয় নি।হিমেল এর কাছে চিত্র টা ছিল উল্টো । পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ না শুনলেই হিমেল এর মনে হতো লেখাপড়া তে তার মন বসতো না । কেননা প্রায় ২০০৯-২০১০ সাল এ পাখির মায়া ও ভালোবাসায় পড়েন হিমেল। তখন থেকেই পাখি গুলো হিমেল এর বন্ধু তখন থেকেই তাদের সঙ্গে এগিয়ে চলা । ছোট হিমেল এর ছোটবেলায় অন্য ছেলেদের মত এটা সেটার আবদার কখনোই ছিলোনা।
সব জায়গায় কিছু না হলেও পাখি চাই তাদের কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা চাই । এবং তাদের নিয়েই পথ চলা হিমেল এর সুখ দুঃখের সাথী এ বাজেরিগার ।
হিমেল জানান শুরুর দিনগুলো পাখির প্রজনন বা যত্ন সঠিক জানতেন না কিন্তু বাজেরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং বড় ভাইয়া সুলতান বাবু এর থেকে হিমেল সকল কিছু জানতে এবং বুঝতে শিখেন । পরবর্তীতে হিমেল কে আর থেমে যেতে হয়নি কিছু মাস পরেই তিনি পাখি নিয়ে সফলতা অর্জন করতে পারেন। সেখান থেকেই হিমেল এর উদ্যোক্তা জীবন এর যাএা শুরু ।নিজের ভালোবাসার পাখি গুলো নিয়ে নিজের স্বপ্ন সাজাতে সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরী করেন যার নাম T&H Agro Fram.
কাজ করতে গেলে আসলেই কোন কাজ সহজ হয়ে উঠে না। কাজ করতে গিয়ে হিমেল এর অনেক খাবার অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে ও দিন কেটেছে। হিমেল তার অনেক কথার ভেতর অল্প কটা কথা জানিয়েছেন শুধু দোকান থেকে পাখি ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন। যখন হিমেল বুঝতেন না তখন তারা দুইটা মেল দিয়ে জোড়া বলে দিয়েছিল রানিং পাখি বলে বাচ্চা পাখি দিয়ে দিত । যেখানে একটা ওষুধের প্রয়োজন ছিল সেখানে এতগুলো ওষুধ ধরিয়ে দিত । খামার থেকে পাখি সংগ্রহ করার পর এর সমস্যাগুলো আর হয় নি ।এমন খারাপ অবস্থান ভেতর দিয়ে প্রথম দিকের দিনগুলো কাটে হিমেল এর তবুও হাল ছাড়েন নি তিনি।
কাজ করতে গেলে শুধু যে খারাপ অভিজ্ঞতা হয় তা কিন্তু নই ঘটেছে মজার ও ঘটনা।হিমেল জানান মজার একটা ঘটনা আছে যা এখনো মনে পড়ে পাখি পালন এর শুরুতে আমার এক জোড়া পাখি ডিম এবং তা থেকে বাচ্চা করে । কিন্তু কিছুদিন পর ফিমেল পাখিটা মারা যায় তার জন্য আমি সেই কান্না করেছিলাম তার জন্য আমার স্কুল এবং প্রাইভেট অফ হয়ে গিয়েছিল । যা মনে পড়লে এখন হাসি পাই । আর অভিজ্ঞতা বলতে পাখি পালন একটা আর্ট যারা তাদের কাছে টেনে নিতে পারে তারা খুব সহজেই আর্ট করতে পারে ।এখন পাখি তার বন্ধু যখন হাতে আসে ঘাড়ে বসে তখন সে মুহুর্তের ভালোলাগা মুখে বলে প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।
অল্প বয়স এর উদ্যোক্তা হিমেল এর জীবন এর প্রাপ্তি ও কম নেই। আসলে মানুষ চেষ্টা ও ইচ্ছে শক্তি দ্বারা বহুদূর যেতে পারেন ঠিক তেমনি পাখি পালনে বাজেরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ কে সব সময় পাশে পেয়েছেন হিমেল। এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিজনেসের জন্য বা বিজনেসের প্রসার ঘটানোর জন্য ক্যাব কে সব সময় পাশে পেয়েছেন । তাছাড়া বাজেরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশে প্রথম সুলতান বাবু ভাইয়ার দেওয়া ভালোবাসাই বাজেরিগার বন্ধু (লকেট চেন)উপহার পায়।এটা তার কাছে সেরা প্রাপ্তি।
ক্যাব থেকে জানতে চাওয়া হিমেল এর কাছে তার কাজের কিছু চ্যালেন্জিং বিষয় হিমেল খুব সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন -
ছোট থেকে পাখি পালন করতে করতে এই জায়গায় আসতে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেক মানুষের কথা শুনতে হয়েছে যা কখনোই সহ্য করার মতো ছিল না। কিন্তু সহ্য না করলে তো কখনো কোন কিছু নিয়ে সফল হওয়া যায় না। কাজের প্রতি ভালোবাসা ধৈর্য রাখাটা খুবই জরুরী এবং লক্ষ্য একটাই । যেহেতু আমি সবার থেকে আলাদা উদ্যোগ এবং জীবন্ত প্রাণী নিয়ে কাজ করি সেহেতু আমার চ্যালেঞ্জিং বিষয় অনেকগুলোই । পাখির সঠিক যত্ন নেওয়া পাখি সম্পর্কে জানা যা অতি প্রয়োজনীয় । যেহেতু পাখি থেকে অনেক বাচ্চা পাওয়া সম্ভব সেহেতু বিষয়টা আছে মার্কেটিংয়ের অনেকেই পাখির বাচ্চা গুলা দোকানে বিক্রি করতে যাই যার জন্য সঠিক দাম পাওয়া যায় না কেননা তারা সবকিছুই হিসাব করেন তাই হিমেল বলেন আগে নিজের পরিচিতি এবং নিজের সরাসরি বিক্রি করার মাধ্যম তৈরি করতে হবে না হলে কখনোই লাভবান হওয়া সম্ভব না । কেননা পাখি থেকে বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং বিষয় যারা এ জগতে এসে লাভবান হয়েছে তারা অনেকদিন পালন করার পরেই এ জায়গায় এসেছেন ।
তরুণ এ উদ্যোক্তা হিমেল নিজে তরুণ হয়ে ও তরুণ দের জন্য কিছু মূল্যবান কথা শেয়ার করেন-বেকারত্ব দূর করুন , নিজে কিছু উদ্যোগ নিন । অবশ্যই আপনি উদ্যোগ নিন কিন্তু অন্যের লাভ দেখে বা কথা শুনে নয় । এমন কিছু করুন যেটার প্রতি আপনার ভালোবাসা শ্রদ্ধা ধৈর্য সবগুলোই থাকবে। যা কিছু নিয়েই উদ্যোগ নেন না কেনো সফল হতে হলে আমি মনে করি সেটার প্রতি ভালোবাসা ধৈর্য আবশ্যক সেটা থাকলেই আপনি অবশ্যই সফল হবেন । আর আপনি যদি পাখি নিয়ে কাজ শুরু করতে চান তাহলে আপনি প্রথমে দুই জোড়া বাচ্চা পাখি নিয়ে শুরু করুন আগে তাদের সম্পর্কে জানুন বুঝুন লাভ লস সম্পর্কে ধারণা নিন ।তারপর বড় পরিসরে শুরু করুন তাহলেই আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন । উদ্যোগ নিলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় কিন্তু সফল হওয়া মোটেই সহজ নয়।
মোঃ শাকিব হাসান হিমেল কে ঘিরে শেষ কিছু কথা -
চাঁপাইনবাবগঞ্জে হিমেল প্রথম খামার থেকে সরাসরি পাখি প্রেমীদের কাছে পাখি দেখেশুনে নেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেখানে দোকানের কাছ থেকে নিলে প্রতারণার ঝুঁকি থেকে যায় সেখানে 0% ঝুঁকি ছাড়া কাজ করছেন তিনি। আর সকলের উদ্দেশ্যে দেশি পাখি পালন কে না বলুন দেশি পাখি ধরা এবং খাঁচায় বন্দী করা থেকে বিরত থাকুন । কেজ বার্ড' পালন করুন দেশের সম্পদ রক্ষা করুন । দেশকে ভালোবাসুন প্রকৃতিতে দেশি পাখিদের থাকতে দিন ।হিমেল সকলের জন্য বলেন আসুন কেজ বার্ড পালন করি বন্য পাখি পালন কে না বলি । মাদক মুক্ত দেশ গড়ি কেজ বার্ড পালন করে । ইনশাআল্লাহ আপনাদের সহযোগিতায় একদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাই দেশি পাখির নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলবেন মোঃ শাকিব হাসান হিমেল।
ফিচার লেখিকা - আয়েশা সিদ্দিকী মৌসুমী।
0 coment rios: