অনলাইনে সময় কাটাতে গিয়ে হয়ে উঠলেন অনলাইন উদ্যোক্তা। অবসরে অনলাইনে কারণে অকারণে সময় দিতে দিতে কোন চিন্তা ছাড়াই নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে গোলাম কবির হয়ে উঠলেন অনলাইন উদ্যোক্তা ।
গোলাম কবির এর শুরুটা হয়েছিলো হঠাৎ কোন প্ল্যান ছাড়াই। পাঞ্জাবী নিয়েই উদ্যোগ নিবেন এরকম প্ল্যান ছিল না তার। ফেসবুকে অনেক সময় কাটাতেন এবং তার এই সময় কাটানোটা ঠিক উপায়ে হচ্ছেনা বলে মনে হতে থাকে। গোলাম কবিরের ভাবনায় আসে ফেসবুকের সময়টাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়।
তার এক বন্ধু খাদি পাঞ্জাবীর ব্যবসা শুরু করে সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ফেসবুকে সেল পোস্ট দেয় গোলাম কবির এবং পরে তিনি অফার করেন কেউ তার সাথে ব্যবসা করতে চায় কি না?
অনেক সময় নষ্ট হতো ফেসবুকে, সেজন্য আর কোন সময় নষ্ট না করে ভাবলেন সময়গুলো সময় এই ব্যবসার পিছনেই দিয়ে দেখি।যেই ভাবনা সেই থেকে কাজ শুরু।
আজ তিনি পাঞ্জাবি ও আম নিয়ে কাজ করে নিজেকে নতুন করে পরিচিত করতে পারছেন উদ্যোক্তা হিসেবে।
জন্মস্থান দারিয়াপুর নামক গ্রামে। গ্রামটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত।
গ্রামের একপাশে নদী আর একপাশে বিল এমনই একটা গ্রাম দারিয়াপুর। সেখানেই বেড়ে উঠা গোলাম কবির এর।
বর্তমানে বিএসসি এগ্রিকালচারে অনার্স করছেন গোলাম কবির।
পরিবারে তার মা-বাবা, একটা বোন আরেকটা বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
কাজ করতে গিয়ে গোলাম কবির এর সাথে ঘটেছে কিছু মজার ঘটনা ছোট একটা ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। প্রথমদিকে কাজ করতে গিয়ে এক কাস্টমার তার কাছ থেকে ৩টা পাঞ্জাবী নিয়েছিল। গোলাম কবির দিয়ে আসার পরেরদিন ফোন করে বলেন সাইজে হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সাইজটাও উনার হচ্ছিল না। কি আর করার এরকম হতেই পারে বলে পরদিন গিয়ে পাঞ্জাবী ৩টা ফেরত নিয়ে আসেন। খুবই খারাপ লাগছিল তার যেহেতু উদ্যোক্তা জীবন এর প্রথম দিকে সকলেই একটু চিন্তিত থাকেন তিনি ও ছিলেন তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা পেয়েছিলেন তিনি। পরেরদিনেই তার অদ্ভুতভাবে ওই পাঞ্জাবী ৩টার অর্ডার আসে।
কাজ করতে গেলে জয় পরাজয় দুইটাই থাকে সেটাকে মেনে নিয়ে এমন এক পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন গোলাম কবির।এক অপরিচিত লোক গোলাম কবির এর থেকে ২০টা পাঞ্জাবীর অর্ডার করেছিলেন।কিন্তু সে গোলাম কবির কে বলেছিলেন পরে এই রকম সেইম পাঞ্জাবী লাগলে দিতে পারব কি না গোলাম কবির জানতেন তিনি দিতে পারবেন।
পরে সেই লোক বলল আরও কয়েকটা ওই পাঞ্জাবী গুলো লাগবে। কারখানায় খোজ নিতেই জানতে পারেন লকডাউনের কারণে পাঞ্জাবী তৈরি করতে পারছেন না।
কাস্টমার এ কথা শুনে অনেক রাগ করলেন ও কথা শুনিয়ে দিলেন। পরে বললেন এর আশেপাশে কিছু আছে কি না। গোলাম কবির খোজ নিয়ে ওইটার কাছাকাছি একটা পাঞ্জাবী দেখালেন কাস্টমার পছন্দ করলে ২৬টা পাঞ্জাবীর অর্ডার দেন গোলাম কবির। অগ্রীম টাকা না নিয়ে বিশ্বাস করেন কাস্টমার কে ও এরপর যখন গোলাম কবির তাকে ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলেন তখন সে শুধু বলল- কাপড় ভালো না। কমদামী মাল দিতে এসেছেন। নিব না।
ওইখানে প্রায় ১০ হাজার টাকার মাল ছিল। টাকা টা পুরোটাই আটকে যায়। ঈদের দুইদিন আগে। তবুও ভেঙে পরের নি গোলাম কবির।
গোলাম কবির এর জীবন এ রয়েছে অনেক প্রাপ্তি। তিনি তার অনেক প্রাপ্তির ভেতর থেকে বলেন জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে তার সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো-
গোলাম কবির এর লিখা একটা অনুগল্পকে একটা প্রকাশনী তাদের বইয়ে ছাপিয়েছিল। বইটার নাম- শব্দ শতক গল্প কতক। গল্পের নাম- মতিচোর।তাছাড়া তার উদ্যোক্তা জীবন এর অনেক টা পথ বাকি সেগুলো নিয়ে স্বপ্ন সাজান গোলাম কবির এখন।
গোলাম কবির নিজে নতুন হয়েও কাজ এর অভিজ্ঞতা তার কম নয় অনেক কঠিন অবস্থায় দিন গেছে অর্ডার কাস্টমার ফেরোত দেওয়ার পরে।তাই তিনি নতুন দের জন্য কিছু কথা বলেছেন -
যদি পাঞ্জাবী নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে হতাশাজনক অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। অনেক হতাশাজনক বিষয় ঘটে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে প্রথমত।
যেহেতু প্রোডাক্ট একই সেহেতু প্রচারণার ধরন পাল্টাতে পারলে এবং একিউরেট প্রোডাক্ট দিতে পারলে সামনে আগানো যাবে। আর যেকোনো কাজেই লেগে থাকার বিকল্প নাই।
শেষ কথাগুলো- আসলে প্রতিটি মানুষ এর জীবন এ তার নিজের কাজ দিয়ে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা উচিৎ। গোলাম কবির এক সময় অনলাইন এ বন্ধু দের সাথে আড্ডা, গান- কবিতা,গল্প, ভালো - মন্দ সবটা নিয়ে তার অবসর সময় কাটাতেন। সে অবসর সময় টা কাজে লাগিয়ে তার মেধা,পরিশ্রম, ধৈর্য দিয়ে আজ তিনি একটা নতুন পরিচয় এ আমাদের সামনে এসেছেন।
ফিচার লেখিকা - আয়েশা সিদ্দিকী মৌসুমী।
0 coment rios: