নাম তার ফাহিমা আক্তার। কিন্তু সবাই ভালোবেসে ডাকে ফাহিম। ছোটবেলা থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের দারিয়াপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা,আবার ভাগ্যক্রমে দারিয়াপুরেরই বউ হয়েছেন তিনি। মা বাবার ৮ সন্তানের মধ্যে ছোট্ট মেয়েটি ফাহিম, পড়াশোনায় খুব আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এস এস সির পর আর পড়া হয়নি তার। তারপর বিয়ে হয়ে যাওয়া, সংসার করা, সন্তান লালন পালনে খুব ব্যস্ততায় সময় কাটতো এই ফাহিম আক্তারের। কিন্তু তবুও পড়াশোনা না করতে পারার আক্ষেপ তার মন থেকে তখনও যায় নি। সবসময় ভাবতো কিভাবে আবার শুরু করা যায়। আসলে মনের প্রবল ইচ্ছে থাকলে যে, এস এস সির ২০ বছর পরও উৎকৃষ্টতার সাথে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করা যায় তার উত্তম উদাহরণ ফাহিম আক্তার। ২০১৮ সালে ৩.৫৫ গ্রেড পেয়ে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
খুব ইচ্ছে ছিলো চাকুরী করবেন সেজন্য অনেক দৌড়াদৌড়িও করেছেন। কিন্তু চাকরির বয়স না থাকার কারনে আর টাকা না দিতে পারার জন্য কোথাও টিকতে পারেন নি। এদিকে মেয়ে এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে , মেয়েকে বাসায় রেখে বাইরে চাকরি করতে যাওয়া টা খুব সুবিধারও মনে করলেন না তিনি। তাই ঘরে বসে পর্দার সহীত, মেয়েকে দেখাশুনা করে সংসার সামলিয়ে কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেন। আর সেই উদ্যোগের জন্য সহযোগিতা করেছিলেন বোনের মেয়ে।
বর্তমানে ফাহিমের একটা ফেসবুক পেজ আছে যার নাম "চাঁপাইয়ের ঐতিহ্য"। এই পেজের মাধ্যমেই তিনি তার অনলাইনে ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন।
ফাহিম আক্তার নিজ হাতে যাঁতায় পিসা ছাতু,লাল গমের আটা,হোমমেড বাঙালি খাবার আর পাঞ্জাবি নিয়ে কাজ করছেন।
যাঁতা চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য।যাতায় পিসে কোন খাবার বানানোটাও অনেক ঝামেলার এজন্য অনেকে ছাতু খাওয়াও ছেড়ে দিচ্ছেন।আর তাদের কথা ভেবেই ভালো মানের, পরিষ্কার, ভেজালমুক্ত,সুস্বাদু,পুষ্টিকর ছাতু সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া তার কাছে চ্যালেঞ্জিং বিষয় বলে মনে হয়।
তার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ২০ বছর পর এইচ এস সি পাস বলে উনি মনে করেন।
তরুণদের উদ্দেশ্যে ফাহিম আক্তার বলেছেন যে, আমি যদি এই ৪০ বছর বয়সে বিজনেস শুরু করতে পারি তাহলে আপনারা অবশ্যই পারবেন।আমার চেয়ে আপনাদের মনোবল শক্তি অনেক বেশি।তাই যারা ঘরে বসে পর্দার সাথে কিছু করতে চাচ্ছেন তারা আর ভেবে বসে না থেকে আজ থেকেই শুরু করে দিন।শুরু করে লেগে থাকবেন ইনশাআল্লাহ জিতবেন।
ক্যাব উনার উদ্যোগে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে বলে উনি মনে করেন।কেননা ক্যাবের জন্যই আজ তিনি উদ্যোক্তা গৃহিণী থেকে ছাতু আপু হয়ে উঠতে পেরেছেন।ক্যাবের প্রতিটি সদস্য খুব আন্তরিক, ক্যাব থেকে পাওয়া কাস্টমার গুলোর সাথে দেখা হলে হলে তারা কখনো আদর আপ্পায়ন না করে ছাড়েন না।এজন্য আমি ক্যাবকে খুব ভালবাসি।দোয়া করি,ক্যাব যেন একদিন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সকল উদ্যোক্তার, উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প তুলে ধরতে পারে আর ভবিষ্যতে অনেক বড় একটা পরিবার হয়ে উঠতে পারে।
0 coment rios: