Tuesday, August 30, 2022

মাস্টার্স পড়ুয়া মেয়ের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প || ক্যাব

 


নাম তার আরিফা কাদের অদিতি। ডাকনাম সোনিয়া। সবাই ভালোবেসে শোনু বুড়ি বলে ডাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার মেয়ে উনি, ছোটবেলা থেকে সেখানেই বেড়ে উঠা। বিয়ে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরেরই বালিয়াডাঙ্গায় । কিন্তু বর্তমানে জামাইয়ের চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। পড়াশোনা শেষ করেছেন রাজশাহী কলেজ থেকে মাস্টার্সে। 

বাবা যেহেতু ব্যাংকে কর্মরত সেই সুবাদে এই পেশায় চাকরি করার খুব ইচ্ছে ছিল তার। এজন্য মাস্টার্স শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশোনাও শুরু করেছিলেন উনি। ঠিক এমন সময় দেখা দেয় বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাস। চাকরির পরীক্ষা গুলো স্থগিত হয়ে যাই। মানসিক ভাবে খুব ভেঙে  পড়েন। এর মাঝে হুট করে বিয়েও হয়ে যাই। কিছুদিন  যাবত পড়াশোনাও করেছিলেন কিন্তু সংসার সামলিয়ে পড়াশোনা করা একটু কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই উদ্যোক্তা জীবন বেছে নিয়েছিলেন এই উদ্যোক্তা ।


উনি মূলত হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি, পাঞ্জাবী, টুপিস, থ্রিপিস, মাস্ক, বেডসিট, বেবি ফ্রক, কুশন কভার এগুলো নিয়ে কাজ করেন ।উনার উদ্যোগের নাম চিএাঙ্কন 

২০১৮ সালে পড়াশোনার জন্য মেসে থাকাকালীন সময়ে হ্যান্ডপেইন্ট শিখেছিলেন তিনি ।যদিও তখন শখ করে শিখেছিলেন। কিন্তু এটাই যে তার পেশা হয়ে যাবে সেটা তিনি ভাবেননি। লকডাউনে যখন সবাই বাসায় বসে বোর হচ্ছিলেন ঠিক তখনই ২০২১ সালে উনি উনার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন। উনার এই উদ্যোগের পিছনে উনার হাসবেন্ডের ভূমিকা অনেক বেশি। উনার হাজবেন্ড অনেক সাপোর্টিভ বলেই উনি আজ খুব সুন্দর ভাবে তার বিজনেস চালিয়ে যেতে পারছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বাসা থেকে উনার আব্বু,আম্মু রাজি ছিলেন না, কারণ তারা চাইতেন না একজন মাস্টার্স পড়ুয়া মেয়ে বিজনেস করুক। কিন্তু অদিতি তার স্বপ্নটাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান এবং ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সফল উদ্যােক্তা হিসেবে দেখতে চান। 


উনার উদ্যোগের মজার অভিজ্ঞতা গুলো উনি শেয়ার করেছেন:

 কাজ করতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা হচ্ছে ডেলিভারি দেয়া। আমি নিজে নিজে সবার বাসায়  গিয়ে ডেরিভারি দিয়ে আসতাম। এমনও হয়েছে আমি থাকি ২ তালায় আর যারা আমার কাস্টমার তারা সেম বাসার ৪/ ৭ /৯ তালায় থাকে, আমি তাদের বাসায় নক করে করে দিয়ে বেড়াতাম। 

একদিন এমন হয়েছে এক ভাবির বাসায় পারসেল দিতে গেছি। ভাবি বসতে বলে টাকা নিয়ে আসলো দিয়ে ভাবি আমাকে  ৩৫০০  টাকা দিয়েছে। আমি  পাবো ৩৪০০   টাকা। ভাবি ১০০ টাকা ব্যাক পাবে।  আমি খুশির ঠালায় ভাবিকে ১০০ না দিয়ে ৫০০ দিয়ে দিচ্ছিলাম। 


অন্যদিকে অদিতি আপু উনার  খারাপ অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করেছেন এভাবে: আমি যেটা বলবো সেটা সবার কাছে বাজে বা খারাপ নাও হতে পারে। কিন্তু আমার নিজের কাছে বিষয়টা খারাপ লাগে । সেটা হচ্ছে অনেকেই প্রডাক্টের দাম শুনেই অর্ডার দেয়।পরোক্ষনেই বলে আপু দাম একটু বেশি নিবোনা।  এটা খুব বাজে লাগে আমার কাছে। ২য় তো হচ্ছে অনেক প্রতিবেশি আমার কাজ দেখতে এসে সুন্দর সুন্দর করে বাহ বাহ দেয়। কিন্তু দাম শুনে বলে এত দাম? এতে করে অনেক সময় আমার কাজের প্রতি অনিহা চলে আসে। যতোটা পরিশ্রম দিয়ে কাজটা করি তার মূল্য পাওয়া যাইনা। 


 সেকেন্ড কন্ট্রিবিউটর  হিসেবে ক্যাব থেকে পাওয়া পুরস্কার উনার কাছে সেরা প্রাপ্তি বলে উনি জানিয়েছেন।


তার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমত অনলাইন বিজনেসে কাস্টমারের আস্থা অর্জন করা এবং দ্বিতীয়ত প্রডাক্ট সেল করার পর কাস্টমারের হাতে পাওয়া পর্যন্ত টেনশনে থাকা, যে প্রডাক্ট তার মনের মতো হবে কিনা। যখন কোন কাস্টমার বলে খুব সুন্দর হয়েছে তখন মনে হয় যুদ্ধ জয় করলাম। 




তরুণদের উদ্দেশ্যে অদিতি আপু বলেছেন, জীবনে সফল হতে চাইলে দুটি জিনিস প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর জেদ। এই দুটো থাকলে তরুণরা সফল হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেছেন, বাজে সময় এদিক ওদিক পার না করে সর্বোচ্চ ইফোর্ট ক্যাবে দিতে এবং পরিচিতি বাড়াতে আর একটা সময় গ্রুপের পরিচিত মুখ হয়ে উঠলে ক্লায়েন্ট আপনাকে নিজেই খুঁজে নিবে, যেই পর্যায়ে এখন উনি আছেন বলে জানিয়েছেন। "আমি পারবো এই মনোভাবটাই অর্ধেক কাজ সহজ করে দেয় হয়তো" এই থিমে বিশ্বাস করেই উনি তরুণদেরকে কাজ করে যেতে বলেছেন।



ক্যাব উনার উদ্যোগে যেভাবে ভূমিকা রেখেছে বলে উনি জানিয়েছেন:

 ক্যাব আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে বলে আমি মনে করি। অনলাইনে আমি যখন  প্রথম অর্ডার পায় সেটা ছিল ক্যাব থেকেই। কি যে খুশি হয়েছিলাম তা বলার বাইরে। ক্যাব এর মাধ্যমে আমি সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছি।সবাই  আমার প্রডাক্ট সম্পর্কে জানতে পেরেছে।  আমি চাইবো শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ক্যাব  সম্পর্কে জানুক।  ক্যাব এর মাধ্যমে এগিয়ে যাক আমার সকল ভাই ও বোনেরা। ক্যাব এর পাশে ছিলাম,  আছি ও থাকবো ইনশাআল্লাহ।  সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: